টেস্টোস্টেরন হলো মূলত পুরুষদের প্রধান যৌন হরমোন, তবে নারীদের শরীরেও অল্প পরিমাণে এটি থাকে। এই হরমোন মূলত অণ্ডকোষ এবং আংশিকভাবে অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়। টেস্টোস্টেরন শরীরের শারীরিক বিকাশ, যৌন ক্ষমতা, পেশি বৃদ্ধি, হাড়ের ঘনত্ব এবং মানসিক স্থিতিশীলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিশোর বয়সে এই হরমোনের মাত্রা দ্রুত বাড়ে, যা কণ্ঠস্বর ভারী হওয়া, দাড়ি-গোঁফ ওঠা এবং পেশি শক্তিশালী হওয়ার মতো পরিবর্তন ঘটায়।
শুধু শারীরিক পরিবর্তনই নয়, টেস্টোস্টেরন মানসিক স্বাস্থ্যের সাথেও সম্পর্কিত। পর্যাপ্ত টেস্টোস্টেরন লেভেল থাকলে একজন মানুষ আত্মবিশ্বাসী, উদ্যমী এবং মানসিকভাবে সতেজ অনুভব করে। অন্যদিকে, হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে সহজেই ক্লান্তি, বিরক্তি এবং মুড সুইং দেখা দিতে পারে। অনেক পুরুষের ক্ষেত্রে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই হরমোনের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমে যায়।
টেস্টোস্টেরন শুধু যৌন ক্ষমতাই নিয়ন্ত্রণ করে না, শরীরের বিপাকক্রিয়া এবং রক্তের লোহিত কণিকা উৎপাদনেও ভূমিকা রাখে। পর্যাপ্ত টেস্টোস্টেরন না থাকলে পেশি দুর্বল হয়ে যায়, হাড়ের ঘনত্ব কমে যায় এবং শরীরে চর্বি জমে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে। সঠিক মাত্রায় হরমোন বজায় রাখতে সুষম খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম অপরিহার্য।
এছাড়া, জীবনযাপনের নানা প্রভাব যেমন দীর্ঘস্থায়ী স্ট্রেস, অস্বাস্থ্যকর খাবার, অতিরিক্ত মদ্যপান ও ধূমপান টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে। তাই প্রয়োজনে ডাক্তারি পরামর্শ অনুযায়ী ভিটামিন, মিনারেল এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি। প্রাকৃতিক উপায়ে হরমোনের মাত্রা ঠিক রাখা গেলে অনেক শারীরিক ও মানসিক সমস্যার ঝুঁকি কমানো সম্ভব।
টেস্টোস্টেরন হরমোন ও শরীরে এর গুরুত্ব
টেস্টোস্টেরন হরমোন পুরুষদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যৌন হরমোনগুলোর একটি। এটি শরীরের পেশি গঠন, শক্তি বৃদ্ধি, যৌন ক্ষমতা, হাড়ের ঘনত্ব এবং মুড নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বয়সের সাথে সাথে বা বিভিন্ন কারণে টেস্টোস্টেরন হরমোন কমে যাওয়ার লক্ষণ দেখা দিতে পারে। যেমন – ক্লান্তি বেড়ে যাওয়া, যৌন আকাঙ্ক্ষা কমে যাওয়া, পেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া বা মুডের পরিবর্তন।
জিম করলে টেস্টোস্টেরন হরমোন বাড়ে কি?
গবেষণায় দেখা গেছে নিয়মিত ব্যায়াম ও স্ট্রেংথ ট্রেনিং পুরুষদের টেস্টোস্টেরন লেভেল স্বাভাবিক রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে ওয়েট লিফটিং, স্কোয়াট, ডেডলিফটের মতো টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ব্যায়াম হরমোন উৎপাদন বাড়াতে পারে। তবে অতিরিক্ত চাপ বা ওভারট্রেনিং করলে উল্টো টেস্টোস্টেরন লেভেল কমে যেতে পারে।
টেস্টোস্টেরন হরমোন কম হলে কি হয়?
হরমোনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলে শারীরিক ও মানসিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। টেস্টোস্টেরন হরমোন কম হলে কি হয় তা জানলে সহজে প্রতিরোধ করা যায়:
- পেশির শক্তি ও আকার কমে যায়
- চুল পড়া ও হাড় দুর্বল হয়ে যায়
- যৌন আকাঙ্ক্ষা হ্রাস পায়
- অতিরিক্ত ক্লান্তি ও মুড সুইং হয়
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায়
জিমের পাশাপাশি কিছু টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলে স্বাভাবিকভাবেই হরমোনের মাত্রা বাড়ানো যায়:
- পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা
- স্ট্রেস কমানো এবং ধ্যান বা যোগব্যায়াম করা
- প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং জিঙ্কসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া
- অ্যালকোহল ও প্রক্রিয়াজাত খাবার কম খাওয়া
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির খাবার তালিকা
সঠিক ডায়েট হরমোন বৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি। টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির খাবার তালিকা হিসেবে নিচের খাবারগুলো কার্যকর:
- ডিম, চর্বিযুক্ত মাছ (স্যালমন, টুনা)
- বাদাম, কাজুবাদাম ও আখরোট
- অ্যাভোকাডো ও অলিভ অয়েল
- লাল মাংস ও লিভার
- সবুজ শাকসবজি ও ফলমূল
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ভিটামিন
হরমোনের স্বাভাবিক মাত্রা বজায় রাখতে কিছু টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ভিটামিন অপরিহার্য:
- ভিটামিন D – সূর্যালোক ও ফ্যাটি ফিশ থেকে পাওয়া যায়
- ভিটামিন B6 – ডিম, কলা ও মুরগির মাংসে পাওয়া যায়
- জিঙ্ক – সীফুড ও মাংসে সমৃদ্ধ
- ম্যাগনেসিয়াম – বাদাম ও ডাল জাতীয় খাদ্যে থাকে
টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির সাপ্লিমেন্ট বাংলাদেশ
বাংলাদেশে বর্তমানে নানা ধরনের টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির সাপ্লিমেন্ট বাংলাদেশ মার্কেটে পাওয়া যায়। যেমন: জিঙ্ক সাপ্লিমেন্ট, ভিটামিন D ট্যাবলেট, ওমেগা-৩ ফিশ অয়েল এবং হারবাল সাপ্লিমেন্ট। তবে এগুলো গ্রহণের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি, কারণ অতিরিক্ত সাপ্লিমেন্ট শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
ছেলেদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে কি হয়?
যদিও কম মাত্রার হরমোন ক্ষতিকর, কিন্তু অতিরিক্ত বৃদ্ধি সমানভাবে সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। ছেলেদের টেস্টোস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে কি হয় তা জানাও গুরুত্বপূর্ণ:
- অতিরিক্ত রাগ ও আক্রমণাত্মক স্বভাব দেখা দিতে পারে
- ব্রণ ও ত্বকের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে
- প্রোস্টেটের আকার অস্বাভাবিকভাবে বড় হতে পারে
- হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে
নিয়মিত জিম করা, সুষম খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুম ও স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক রাখা সম্ভব। প্রয়োজনে সঠিক টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির ব্যায়াম, প্রাকৃতিক খাবার এবং ভিটামিন গ্রহণের পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট ব্যবহার করলে ইতিবাচক ফলাফল পাওয়া যায়। তবে অতিরিক্ত ব্যায়াম বা সাপ্লিমেন্টের ব্যবহার এড়িয়ে চলাই শ্রেয়।
1 thought on “জিম করলে কি টেস্টোস্টেরন হরমোন বৃদ্ধির পায়?”